তারেকুর রহমান:
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি চলছে। এ ছুটির সঙ্গে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। কোথাও ঠাঁই নেই। শহরের কলাতলী ও আশপাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের কোথাও কক্ষ খালি নেই।
পর্যটকের বাড়তি চাপের সুযোগে কিছু কিছু ব্যবসায়ী থাকা-খাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বেড়াতে আসা অনেকেই কক্ষ না পেয়ে বান্দরবান ও চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ রাতের বাসে নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও হোটেলমালিকেরা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। এখন প্রতিদিনই লাখো পর্যটক অবস্থান করছেন। সাপ্তাহিক কিংবা বিশেষ ছুটিতে পর্যটকের চাপ দ্বিগুণ হচ্ছে।
চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং শেষ হয়েছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজমালিক সমিতির নেতা, পর্যটন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজনকে অনলাইনে হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের পরামর্শ দিয়ে গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
পর্যটকের বাড়তি চাপের কারণে পর্যটন জোনের কলাতলী, শহরের প্রধান সড়ক, বাস টার্মিনাল, মেরিন ড্রাইভসহ বিভিন্ন এলাকা যানজটে অচল হয়ে পড়েছে। শহরের ১০ মিনিটের কোনো পথ যেতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এ অবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণ, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
আজ বিকেলে শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের এই তিন কিলোমিটার জায়গায় কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেউ সাগরে নামছেন, কেউ বালিয়াড়ি থেকে সাগর দর্শনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সৈকতের বাইরে বিপণিবিতান, শিল্প ও বাণিজ্য মেলা এবং বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও ভিড় করছেন পর্যটকেরা।
সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লি, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও সেন্ট মার্টিনেও এখন উপচে পড়া পর্যটক বলে জানান জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজর বেলাল হোসেন।
তিনি জানান, শহরের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে আজ সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক নেমেছেন। বিপুলসংখ্যক পর্যটককে সেবা ও নিরাপত্তা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পর্যটকদের কক্সবাজারে ভ্রমণের আগে অনলাইনে হোটেলকক্ষ বুকিং দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের কক্ষ শতভাগ বুকিং চলছে।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে সপরিবারে কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছিলেন চাকরিজীবী সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘শহরের অন্তত ৫০টি হোটেলে গিয়ে কক্ষ চেয়ে পাইনি। একটি হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে লাগেজ জমা দিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। রাতের বাসে আবার ফিরে যাব।’ তাঁর মতো অনেকেই থাকার কক্ষ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে আসা শফিউল আলম পরিবার নিয়ে কলাতলীর একটি মাঝারি মানের হোটেলে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়ার কক্ষ এখন সাড়ে ৪ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। খাবারের মূল্য খুব-ই বেশি বলে মনে হলো।’
কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকবাহী ৭-৮ হাজার যানবাহন কক্সবাজার শহরে ঢোকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় ৬০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। হোটেল কক্ষের ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
//
আপনার মতামত লিখুন :