বান্দরবানের রঙ ও রূপ: নীলাচলের সূর্যাস্ত থেকে নীলগিরির কুয়াশা ভেজা ভোর


Coxsbazarreport.com প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৫, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ন /
বান্দরবানের রঙ ও রূপ: নীলাচলের সূর্যাস্ত থেকে নীলগিরির কুয়াশা ভেজা ভোর

তারেকুর রহমান, বান্দরবান থেকে  :

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত বান্দরবান জেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার পাহাড়ি সৌন্দর্য, ঝরনা, নদী আর আদিবাসী সংস্কৃতির সমন্বয় প্রতিটি ভ্রমণকারীকে মুগ্ধ করে। সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করা নীলাচলে সূর্যাস্তে এবং নীলগিরি কুয়াশায় মোড়া ভোরে ভাসমান মেঘের খেলা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।

ভ্রমণের শুরুতেই আমরা পৌঁছাই নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবানের শহরের কাছেই অবস্থিত এই পাহাড়ি স্থানটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় পৃথিবী হাতের মুঠোয়। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। আকাশে রঙের খেলা, কমলা আর লাল রঙের অপূর্ব মিশ্রণ। এ সময় বাতাসে একধরনের প্রশান্তি। দূর পাহাড়ের সারি আর নীলাচলের চারপাশে মেঘের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করে। ইকোসেন্স নামক একটি স্পটে বসে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই স্বর্গীয়। প্রকৃতির এই অনবদ্য দৃশ্য জানিয়ে দেয় জীবন কতটা সুন্দর ও উপভোগ্য।

এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল নীলগিরি, যা বান্দরবানের সবচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্দ্র। পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাদের ভ্রমণকে আরও দারুণ করে তোলে। নীলগিরির চূড়ায় পৌঁছে মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। মনে হলো যেন আকাশের কাছে চলে এসেছি। হিমেল হাওয়া আর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

বাংলার দার্জিলিং চিম্বুকের মায়াবি রূপ :

নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথেই শুরু হয় প্রকৃতির মোহনীয়তার ছোঁয়া। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা আর পাইন গাছের সারি যেন ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ঢেউ সমুদ্রের মতো দুলছে।

ঠাণ্ডা বাতাসে ভেসে আসা প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ আর সূর্যের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্য এক অন্যরকম শান্তি দেয়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরল জীবনযাত্রা আরও মুগ্ধ করে।

চিম্বুকের সৌন্দর্য শুধু চোখ নয়, মনও ছুঁয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করাই চিম্বুক ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।

সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ যেন দিনের সেরা আকর্ষণ :

সবশেষে আমরা যাই সাঙ্গু নদীর তীরে। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ছিল পুরো সফরের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।পাহাড়ি নদীর শীতল স্রোতে ভেসে চলার সময় মনে হলো প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। নদীর দুই পাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি গ্রামের চিত্র আর নদীর বয়ে চলার মৃদু শব্দ আর নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় উপজাতীয় মানুষের কর্মব্যস্ততা চোখ জুড়িয়ে যায়। আমরা ছোট্ট নৌকায় নদীর বুকে বসে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করি। সাঙ্গুর মায়াবী সৌন্দর্য যেন মনকে গভীর প্রশান্তি এনে দেয়।

এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি করারও সুযোগ। বান্দরবানের এই সৌন্দর্যময় ভ্রমণ আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে প্রশান্তি, তা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।

বান্দরবানের পাহাড়ি প্রকৃতিতে সময় কাটিয়ে বুঝেছি, ভ্রমণ শুধু স্থান পরিদর্শন নয়, এটি মন ও মস্তিষ্কের জন্য এক অব্যক্ত নিরাময়। পরের গন্তব্যে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ভ্রমণের স্মৃতিগুলোই মনের মণিকোঠায় থাকবে।

//