বুধবার (১৬ অক্টোবর) টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আছারবনিয়া গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক। স্থানীয় লোকজন ঘরের বাইরে এসে গাছের নিচে, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রাখাইন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার রাতে ১৫০টি মতো মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। মঙ্গলবার রাতে কমপক্ষে ২০০টি বিস্ফোরণ হয়েছে। ১৬ অক্টোবর সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৫টি বিকট শব্দের বিস্ফোরণ শুনেন, সঙ্গে যুদ্ধবিমান ও আকাশ থেকে বোমা ফেলেছে বলেও জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আনোয়ার (৬০) বলেন, বোমার শব্দের কারণে এখন আগের মতো মানুষ ফজরের নামাজে আসছে না। হঠাৎ করে বিকট শব্দে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। এতো ভয়ংকর শব্দ আমরা আগে কখনও শুনিনি। বোমার শব্দে ঘর বাড়ি কেঁপে উঠায় আছারবনিয়া গ্রামের অন্তত ২৫টি ঘরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় ঘরের দেয়াল ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহেদ উল্লাহ বলেন, প্রায় কয়েক মাস ধরে এখানকার বাসিন্দাদের চোখে ঘুম নেই। এরমধ্যে গতরাতে ভয়ংকর বোমার শব্দে কাঁপুনিতে এলাকার প্রায় ২০-২৫টি সেমিপাকা টিনশেড ঘরে ও মাটির দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এখন এসব ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
মাহমুদা বেগম (৪৬) বলেন, চার মাসের বেশি সময় ধরে ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আসছি। বিকট শব্দে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাটলে দেয়ালধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
ওপারে মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফের তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রাম। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাইট্যংপাড়া, কায়ুকখালীয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, কুলালপাড়া, শীলবনিয়াপাড়া, খানকার ডেইল, ডেইলপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, সাবরাংয়ের মগপাড়া, পানছড়িপাড়া, আছারবনিয়া, লেজিরপাড়া, ডেগিল্ল্যাবিল, ঝিনাপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়াসহ এসব গ্রামে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে । অনবরত গোলাগুলির বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
সাবরাং ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ বলেন, রাতে নির্ঘুম রাত পার করেছেন স্থানীয় লোকজন। মর্টার শেলের বিকট শব্দে কীভাবে ঘুম আসবে। রাত হলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দ্বিগুণ বেড়ে যায়। হয়তো বা নাফনদীর কারণে বোমা বা মটারশেল এপারে এসে না পড়লেও শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ স্থলবন্দর ও দমদমিয়া এলাকায় কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে স্থানীয় লোকজনের বসতবাড়ি ও অফিসে ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরি বলেন, আতঙ্কে সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে।
তিনি আরও বলেন, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
//
আপনার মতামত লিখুন :