ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ বালির কাছে স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে একটি ফেরি ডুবে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও অন্তত ৩৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জাতীয় উদ্ধারকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এই নৌকাডুবি ঘটনাটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার কেতাপাং বন্দর থেকে বালির গিলিমানুক বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রার মাত্র আধঘণ্টা পর ঘটে।
ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, “কেএমপি তুনু প্রতমা জয়া” নামের ফেরিটি ওই রাতে যাত্রা করেছিল। ফেরিটি ছিল ৫৩ জন যাত্রী, ১২ জন ক্রু এবং ২২টি যানবাহন নিয়ে পূর্ণ। ফেরি ডুবির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সময় গভীর রাতে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। সুরাবায়া সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৩৮ জন যাত্রী, যাদের সন্ধানে আজও তল্লাশি চলছে।
বানিউয়াঙ্গি জেলার পুলিশের প্রধান রামা সামতামা পুত্র জানান, “ফেরিটি ডুবে যাওয়ার পর অনেক যাত্রী উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ভেসে ছিলেন। কিছু মানুষকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ এখনও রাতভর চলে এবং সক্রিয় রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিখোঁজদের সন্ধানে এখন পর্যন্ত দুটি টাগবোট, দুটি ইনফ্ল্যাটেবল বোটসহ মোট ৯টি নৌযান অংশ নিয়েছে। প্রায় ২ মিটার (সাড়ে ৬ ফুট) উচ্চতার ঢেউয়ের মধ্যে রাতভর উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে।”
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ দেশ। এখানে প্রায় ১৭ হাজারের বেশি দ্বীপ রয়েছে এবং এসবের মধ্যে ফেরি যাতায়াত যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কিন্তু নিরাপত্তা বিধিনিষেধ যথাযথভাবে মানা না হওয়ায় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে থাকে নিয়মিত। ফেরি ডুবে যাওয়া বা নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়, যা দেশটির সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
স্থানীয়রা বলছেন, “আঞ্চলিক জলবায়ুর কারণে মাঝেমধ্যে সমুদ্র উত্তাল থাকে। ফেরি পরিচালকদের মধ্যে অনেক সময় সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।”
এই ফেরি দুর্ঘটনার ফলে আহত বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের মাঝে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধার করতে এবং তাদের পরিবারদের সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় ফেরি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ কারণে দেশটির নৌ নিরাপত্তা উন্নয়নে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা কঠোর নিয়মনীতি প্রণয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে বালির গিলিমানুক বন্দরে উদ্ধারকাজ তীব্র গতিতে চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে। তবে, সমুদ্রের অতিরিক্ত উত্তাল অবস্থার কারণে উদ্ধারকাজ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও চলমান রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং বিশেষ করে জলযান চলাচলের ক্ষেত্রে সব সময় নিরাপত্তার বিষয়গুলো মানার ওপর গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :