ওমর ফারক হিরু :
প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমনের সুযোগ থাকলেও এই মৌসুমে তা থাকছেনা। আজ শনিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের এ সিদ্ধান্তে আগামী ৯ মাস পর্যন্ত দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। তবে ভর পর্যটন মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ি ও বিনিয়োগকারিরা। তাদের দাবী অন্ত্যত আরো ১ মাস (ফেব্রæয়ারী) উন্মুক্ত রাখা হোক সেন্টমার্টিন।
বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠা দেশের প্রবাল সমৃদ্ধ একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন আর দ্বীপটিতে প্রকৃতির নান্দনিক অপার সৌন্দর্য্য উপভোগে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিনই ভ্রমনে হাজারো পর্যটক। যেখানে স্বচ্ছ সুনীল জলরাশি, সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়া-নিশিন্দার প্রাকৃতিক ঝোপ এবং পাথুরে সৈকতে মোহনীয় সৌন্দর্য্য অবগাহনে মেতে উঠেন ভ্রমনপিপাসু মানুষেরা। একটা সময় পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ, শামুক-ঝিনুক কিংবা প্রবাল পাথর বিক্রির পাশাপাশি কৃষিকাজই ছিল দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু গত দুই দশকের বেশী সময় ধরে দ্বীপের বাসিন্দারা নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়। পর্যটক যাতায়তকে কেন্দ্র করে দ্বীপে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ, আড়াই শতাধিক রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট আরও কয়েক শত নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মূলত পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে ৪ মাসের আয় দিয়ে বছরে বাকি দিনগুলো নির্বাহ করে দ্বীপের বাসিন্দারা। তবে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি নানা বিধি-নিষেধের কারণে চলতি মৌসুমের গত ১ ডিসেম্বর থেকে দ্বীপে প্রতিদিন যাতায়তের সুযোগ পায় মাত্র দুই হাজার করে পর্যটক। কিন্তু সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কাল শনিবার থেকে। এতে পরিবার ও বিনিয়োগ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরাও। আর উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিন স্টেশনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে দ্বীপের বাসিন্দারাসহ পর্যটন ব্যবসায়িরা। এসময় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত ফেব্রæয়ারী এক মাস যেন পর্যটকদের যাতায়তের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এমন দাবি তাদের।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, সরকারের এই সিন্ধান্তে সেন্টমার্টিনবাসী মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম হচ্ছে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্তে দ্বীপবাসীকে অনাহারে থাকতে হবে। এইটা সময় মাছ ধরার উপর নির্ভর দ্বীপের লোকজন বর্তমানে পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন চালাচ্ছে। দুই মাসের আয় দিয়ে এই মানুষগুলো ১০ মাস চলতে পারবেনা।
সেন্টমার্টিনবাসী লিয়াকত মিয়া জানান, শান্তিপ্রিয় সেন্টমার্টিনবাসী পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে। এই অবস্থায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সীমান্ত সংলগ্ন এই মানুষগুলো অর্থের অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার কিছুদিন উন্মুক্ত রেখে কিভাবে কি পরিবেশ রক্ষা করছে মাথায় ধরেনা। তার চেয়ে বরং ওই দ্বীপ থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটক বান্ধব করা হোক।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন জানান, এদিকে প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে দ্বীপে পর্যটক যাতায়ত শুরু হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নকে ঘিরে এক মাস দেরীতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই আজ থেকে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে হয়েছে। এতে দ্বীপবাসীর ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়িদের বিনিয়োগ চরম হুমকিতে পড়েেছ বলে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ফেব্রæয়ারী মাসে পর্যটক যাতায়ত উন্মুক্ত রাখার দাবিতে উচ্চ আদালত রিট আবেদন করা হলেও আদালতে শুনানীর অপেক্ষায় ঝুলে আছে। আগামী ৪ ফেব্রæয়ারী আদালতের আদেশের উপর নির্ভর করছে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়িদের ভাগ্য।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তমতে, নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার করে পর্যটক যাতায়ত এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়। আর ওই নির্দেশনার আলোকে পহেলা ফেব্রæয়ারী থেকে দ্বীপটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে আগামী অন্তত ৯ মাস দ্বীপে আর কোন পর্যটকের যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত ছোট প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের আয়তন ১৭ বর্গকিলোমিটার। যেখানে বসবাসকারি স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের বেশী। আর দ্বীপটিতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িদের সংখ্যা সহস্ত্রাধিক।
//টিআর
আপনার মতামত লিখুন :