ওমর ফারুক হিরু :
সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৈরী আবহাওয়া আর ইলিশের সংকটের মধ্য দিয়েই শেষ হলো ভরা মৌসুম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। তা এবছর কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। এদিকে আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশ হয়ে পড়েন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈরী আবহাওয়ায় ভরা মৌসুমেও ঠিকমত সাগরে মাছ শিকারের যেতে পারেনি জেলেরা। তার মধ্যে ইলিশের সংকট, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার ট্রলারের নির্বিচারে মাছ ধরাসহ নানা প্রতিক‚লতায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ শিকার করতে পারেনি জেলেরা। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২৪ এ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। এদিকে মা ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুমকে কেন্দ্র করে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেজ্ঞা। এ সময় বেকার হয়ে পড়া জেলেদের সহায়তা প্রদানে অনিয়ম নিয়েও হতাশ মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।
ট্রলার মালিক আব্দুর রহিম জানান, গেল ৬৫ দিন বন্ধ শেষে আশা করেছিলাম হয়ত এইবার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু একের পর এক সিগনাল আর ইলিশের দেখা না মিলায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এদিকে আবার শুরু হচ্ছে ২২ দিনের বন্ধ। এই বন্ধগুলোতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এদেশের জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে না গেলেও ঠিকই মিয়ানমার-ভারতের ট্রলি বা ট্রলার এসে নির্বিচারে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
বোটের মাঝি লিয়াকত মিয়া জানান, জেলেদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম সাগরে মাছ শিকার। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে। আর এই মানুষগুলোর সাথে প্রতারণা করা হয় ত্রাণ সহায়তা প্রদানে অনিয়ম করে।৪
আরেক মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, একটি ট্রলার রেড়ি করে সাগওে মাছ ধরতে পাঠাতে যে পরিমানের টাকা খরচ হয় সেই টাকাও উঠছেনা। তার মধ্যে সাগরে ইলিমের সংকট। এতে বোট মালিকের পাশাপাশি মাঝি-মাল্লারাও ক্ষতিগ্রস্থ।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার জিএম রাব্বানী জানান, সাগরে মাছ ধরার মৌসুম চলমান থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ শিকারে সুবিধা করতে পারছেনা। গেল ৬৫ দিন বন্ধ শেষে ৬ বার সিগনাল পড়েছে। তার মধ্যে সাগরে মাছও কম পড়ছে। ফলে বাজারে মাছের পরিমান কম এবং দামও বাড়তি। তার মধ্যে মাছ উৎপাদন কম হচ্ছে। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাবে অবতরণ কেন্দ্রে মাছ আহরণ হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টন। ২০২৩-২৪ এ এর পরিমান কমে দায়িয়েছে ৬ হাজার টনে। মাছ কম ধরা পড়ার সাথে ইলিশও কম পড়ছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) ৭’শ টন মাছ অবতরণ হয়েছে। তার মধ্যে ইলিশ ছিল মাত্র ১৭৩ টন। অন্যদিকে তার আগের মাসে (অগাস্ট) মাছ অবতরণ হয়েছে ৭১০ টন। এতে ইলিশ ছিল ২১০ টন। এতে বুঝা যাচ্ছে সাগরে মাছের পরিমানই কম আসছে।
তিনি আরো জানান, ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের যে বন্ধ শুরু হয়েছে তা মূলত মা’ ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিও জন্য। যাতে করে সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পারে। যদি জেলেরা এই বন্ধ না মানে তাহরে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদনে ক্ষতি হবে। এই ২২ দিন তাদের জীবিকায় কষ্ট হলেও এই বন্ধ তাদের ভালর জন্য। তবে সরকার তাদের বিজিএফ চাল সহ অন্যান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
কক্সবাজারে নিবন্ধিত ৫ হাজার ট্রলারের সাথে জড়িত আছে নিবন্ধিত ৯ হাজার ৬২০ জেলে। মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে ২২ দিনের নিষেজ্ঞাতে মেনে চলার পাশাপাশি জেলেদের সঠিকভাবে সহায়তা প্রদানের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
//টিআর
আপনার মতামত লিখুন :