ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে দেশটিতে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শনিবার (৬ অক্টোবর) তেল আবিবের কিরিয়া সামরিক সদর দপ্তরে দেওয়া এক ভাষণে এ ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ইরান ইসরায়েলে যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশ্বের কোনো দেশই তার শহর ও নাগরিকদের ওপর এ ধরনের হামলা মেনে নেবে না। ইসরায়েলও মেনে নেবে না।’
নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের দায়িত্ব ও অধিকার আছে আত্মরক্ষা করার এবং ইরানের আক্রমণের জবাব দেওয়ার। ইসরায়েল তা করবে।’
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তেহরান জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও আইআরজিসি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরোশনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
তবে ইরানের ছোড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের হামলায় একটি বিমানঘাঁটিসহ আরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে তেল আবিব।
নেতানিয়াহু তার ভাষণের প্রায় পুরোটা জুড়েই লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, গাজায় এক বছর ধরে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে উত্তর সীমান্তে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সাথেও লড়াই করছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরের দিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে হিজবুল্লাহ।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল তার সামরিক ফোকাস গাজা থেকে উত্তর সীমান্ত সরিয়ে নিয়েছে, যেখানে অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহর প্রায় প্রতিদিনের রকেট ও ড্রোন হামলা ৬০ হাজারেও বেশি লোককে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে।
উত্তর সীমান্তে ইসরায়েলিদের বাড়িতে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে, যখন আমরা গাজায় হামাস ব্যাটালিয়নগুলোর ধ্বংসের শেষের দিকে অগ্রসর হয়েছিলাম, তখন আমরা উত্তরের বাসিন্দাদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পূরণ করতে শুরু করেছি।’
হিজবুল্লার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাপক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (হিজবুল্লাহ নেতা) হাসান নাসরাল্লাহ এবং হিজবুল্লাহ নেতৃত্বকে নির্মূল করেছি, আমরা রাদওয়ান বাহিনীর কমান্ডারদের নির্মূল করেছি, যারা গ্যালিলে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল এবং আমাদের নাগরিকদের ৭ অক্টোবরের চেয়েও বড় এবং আরও ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।’
নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট মজুদের ‘বড় অংশ’ ধ্বংস করেছে। সীমান্তের কাছে হিজবুল্লাহর গোপনে নির্মাণ করা অস্ত্র আমদানির টানেলও ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা এখনও হুমকি অপসারণ সম্পূর্ণ করিনি, তবে আমরা স্পষ্টভাবে যুদ্ধের ভারসাম্য পরিবর্তন করেছি।’
নেতানিয়াহু বলেন, ‘হিজবুল্লাহ এবং পুরো বিশ্ব ইসরায়েলের লোহার মতো মজবুত সত্ত্বা আবিষ্কার করেছে। ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যারা যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ইরানের হুমকি অন্তর্ভুক্ত, যা আমাদের উপর সব হামলার পেছনে রয়েছে- গাজা থেকে, লেবানন থেকে, ইয়েমেন থেকে, ইরাক ও সিরিয়া থেকে এবং অবশ্যই ইরান থেকেও।’
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শনিবার (৫ অক্টোবর) এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানোর জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সমালোচনা করেছেন।
এক্স পোস্টে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইরান নেতৃত্বাধীন বর্বরতার শক্তির বিরুদ্ধে ইসরায়েল যখন লড়াই করছে, তখন সব সভ্য দেশকে ইসরায়েলের পাশে শক্তভাবে দাঁড়ানো উচিত। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও অন্যান্য পশ্চিমা যেসব নেতারা এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছেন, তাদের ধিক্কার জানাই।’
//টিআর
আপনার মতামত লিখুন :