কক্সবাজারে মৎস্যজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যৌথ পরিদর্শন


Coxsbazarreport.com প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন /
কক্সবাজারে মৎস্যজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যৌথ পরিদর্শন

কক্সবাজার রিপোর্ট :

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপের মৎস্যজীবীরা সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগরে মাছ ধরায় বিরতি রাখেন। সেই সময়টায় তাদের জীবিকা চালাতে হয় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। তবে, দিনমজুরের কষ্টমাখা জীবন আর পরিবারের জন্য পুষ্টিকর খাবারের সংকট নিয়েও তাদের মনে আছে প্রত্যয় ও সচেতনতা।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর), কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত যৌথ পরিদর্শন সফরে পুষ্টি কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে অংশ নিয়ে এই সংগ্রাম ও সংকটের কথা সরাসরি শোনেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন দলের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা স্থানীয় মৎস্যজীবী আবদুল লতিফ ও তার সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে এক উঠান বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে লতিফ তার সংগঠনের ৩০ থেকে ৪০ জন নারী-পুরুষ সদস্যের কথা তুলে ধরেন, যারা নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক্ষেত্রে মৎস্যজীবী, মা ও শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার ও পরিবেশগতভাবে সহায়তা করে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ‘অ্যাডপটিং এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ ফর নিউট্রিশন (আমান)’ প্রকল্প।

আবদুল লতিফ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের কষ্ট হলেও আমরা সরকারের বিধি মেনে চলি। তখন জীবিকার জন্য দিনমজুরের কাজ করতে হয়, আর এলাকাবাসীকে সচেতন করতে সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিই।’

পাশাপাশি তিনি এলাকার স্বাস্থ্যসেবা সংকটের কথা তুলে ধরে লতিফ আরও বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। আমাদের এলাকায় একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক খুব প্রয়োজন।’

তার প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অং সুই প্রূ মারমা রামু উপজেলায় ১৪৯টি শূন্যপদে দ্রুত জনবল নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। এতে করে এলাকার জনগণের চিকিৎসা সেবা আরও সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।

পরিদর্শন সফরের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা রামু উপজেলার পূর্বদ্বীপ ফতেখাঁরকুল এলাকায় স্থানীয় কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের সাথে সভায় অংশ নেন। সেখানে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এবং পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেন তারা।

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সুদর্শন কান্তি দাশ জানান, ‘১৫-২০ হাজার মানুষ আমাদের ক্লিনিক থেকে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। আগে গর্ভবতী নারীরা বাড়িতে সন্তান প্রসব করতেন। এখন ক্লিনিক হাতের নাগালে থাকায় তারা রাত-বিরাতে এসে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সন্তান প্রসব করছেন, যা তাদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ।’

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকে। সবার উচিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা, যাতে তারা সব সময় সুস্থ থাকতে পারেন।’

নিউট্রেশন ইন্টারন্যাশনালের প্রজেক্ট অফিসার অমিত কুমার মালাকারের সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানে জয়েন্ট সুপারভিশন ভিজিটে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. অং সুই প্রূ মারমা, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো তাহেরুল ইসলাম খান, উপ-পরিচালক ডা. মো. আক্তার ইমাম, ডা. নুসরাত জাহান, ডা. নুসরাত জাহান মিথেন, কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. ইমরুল কায়েস, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও, এই যৌথ পরিদর্শন সফরের মাধ্যমে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সুরক্ষায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই সফরের মাধ্যমে কক্সবাজারের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি কার্যক্রমের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আসবে।

//টিআর