মিয়ানমার সীমান্তে সাড়ে ৮ বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত ৫৭, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন


Coxsbazarreport.com প্রকাশের সময় : জুলাই ১, ২০২৫, ৫:১৫ পূর্বাহ্ন /
মিয়ানমার সীমান্তে সাড়ে ৮ বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত ৫৭, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন

কক্সবাজার রিপোর্ট ডেস্কঃ

মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইন বিস্ফোরণে গত সাড়ে আট বছরে কমপক্ষে ৫৭ জন হতাহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৫ জন নিহত এবং ৪৪ জন পা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।

মর্মান্তিক এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে চেরারমাঠের বাসিন্দা বদি আলমের গল্প, যিনি ২০১৮ সালে ঝাড়ুফুল কাটতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারান। চলাফেরার সক্ষমতা হারানোয় উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

এমনই আরেকজন ভুক্তভোগী চাকঢালা এলাকার ফরিদুল আলম। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে তিনি পা হারান। কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে চলাফেরা করলেও ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। কর্মসংস্থানের জন্য আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (AA), যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা সীমান্তে নির্বিচারে মাইন পুঁতে রাখছে।

মাইন বিস্ফোরণে যারা নিখোঁজ ও নিহত

চাকঢালার বাসিন্দা আমির উদ্দিন ২০২৩ সালে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের পর নিখোঁজ হন। স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার জানান, চার মাস ধরে তাঁর কোনো খোঁজ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই।

পরিসংখ্যান (২০১৭–২০২৪):

মোট হতাহত: ৫৭ জন , মৃত্যু: ৫ জন (তাদের মধ্যে ৩ জন রোহিঙ্গা) ,পা হারিয়েছেন: ৪৪ জন , ২০২4 সালের জানুয়ারি–জুন: ১৩ জন , ২০১৭ সালে: ৮ জন পা হারান, ৩ জন নিহত , ২০১৮–২০২২: ৯ জন পা হারিয়েছেন,

২০২৩ সালে: ১০ জন পা হারিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৭ সালের একটি ঘটনায় সীমান্ত পারাপারের সময় একটি হাতি মাইন বিস্ফোরণে মারা যায়।

সীমান্তে বিস্ফোরণ রোধে সীমাবদ্ধতা

বিজিবির রামু সেক্টরের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো মিয়ানমারের ভূখণ্ডে হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বিজিবির টহল এড়িয়ে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। মিয়ানমার মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সই করেনি, ফলে তাদের জবাবদিহিরও বাধ্যবাধকতা নেই।”

তিনি আরও বলেন, “এখন সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিবাদ জানানো বা আলোচনার সুযোগও নেই। তাই আমাদের জনগণকেই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”

স্থানীয়দের আহ্বান

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারের কাছে পুনর্বাসন, ভাতা ও কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশি উদ্যোগ গ্রহণের দাবিও তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।