জাতীয় স্বার্থে প্রতিহিংসামূলক আচরণ ঠিক নয়, দূর্ভাগ্যবশত এটা হয়েছে: তামিম


Coxsbazarreport.com প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ৫:৪২ পূর্বাহ্ন /
জাতীয় স্বার্থে প্রতিহিংসামূলক আচরণ ঠিক নয়, দূর্ভাগ্যবশত এটা হয়েছে: তামিম

খেলাধুলা ডেস্ক :

‘সেই যাত্রাটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না। আমি কখনো ভাবিনি যে, আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলব না। তখন আমার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা এবং তারপর আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, কিন্তু তখন অনেক কিছু ঘটে যা নিয়ে কখনো পরিকল্পনা করা হয়নি।’ -কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর, পরে ফিরে আসা এবং বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে তামিম খোলাখুলি কথা বলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যম স্পোর্টস্টারে। সাক্ষাৎকারে তামিম সরাসরি না বললেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ার পেছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ কাজ করেছে।

তার ভাষ্য, ‘আপনার ব্যক্তিগতভাবে খারাপ সম্পর্ক থাকতে পারে, বা মানুষের সাথে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু যখন জাতীয় স্বার্থের কথা আসে, তখন সবাইকে এক হতে হবে এবং কোনো প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত এটা ঘটেছে। আমি খুবই আবেগপ্রবণ মানুষ এবং ওই দিনগুলোতে আমার সঙ্গে যা কিছু ঘটেছিল, আমি তা ভালোভাবে নিইনি এবং সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

পেশাদার ধারাভাষ্যকার হিসেবে তামিমের যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সিরিজ দিয়ে। এর আগে আন্তর্জাতিক সিরিজ ও বিপিএলে শখের বশে ধারাভাষ্য দিলেও এবার পুরো সিরিজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তামিম। নিজের সময়টা বেশ উপভোগ করছেন তিনি। তারই ফাঁকে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন।

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে যেভাবে দল থেকে তাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল তা মোটেও ভালোভাবে নেননি তামিম। বিশ্বকাপের পর তাকে ফেরানোর কথা একাধিকবার বলা হয়েছিল। নতুন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব পাওয়ার পর তামিমকে নিয়ে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নতুন বোর্ড সভাপতি বলেছেন,‘আমার ব্যক্তিগত মত, তামিম ইচ্ছা করলে আরও দুই–তিন বছর খেলতে পারে। আমি চাই সে অন্তত আরও দুই বছর ক্রিকেট খেলুক।’

কিন্তু তামিমের দাবি, তার ফিরে আসার জন্য যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে, `আমি যেভাবে শেষ করেছি, তা সুখকর ছিল না। সুতরাং, আমার ফিরে আসা এবং খেলার জন্য, একটি উদ্দেশ্য থাকা দরকার। আমি এমন কেউ নই যে, ফেরার জন্য ফিরে আসব এবং তারপরে মাত্র চার বা পাঁচটি ম্যাচ খেলব। খেলার কারণটা কী? সবাই বলে, ফিরে আসতে। তারা আমাকে চায়। কিন্তু আমি যদি পাঁচটি ম্যাচ খেলি, তাহলে কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের কি উপকার হবে? তারা কি করতে চায় এবং অর্জন করতে চায় তার পরিপ্রেক্ষিতে যদি একটি সঠিক পরিকল্পনা থাকে, তবে আমি এ নিয়ে ভাবতে পারি এবং আমরা সেই অনুযায়ী কথা বলতে পারি….’

ঘুরে ফিরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আলোচনাই হচ্ছে বেশি। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েও খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন তামিম, ‘এখন, আপনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা বলছেন, যেখানে আপনার চার থেকে পাঁচটি ওয়ানডে থাকবে বড়জোর এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিনটি আছে। মূলত, আপনি ছয় থেকে সাতটি খেলার কথা বলছেন। আমি যে জায়গা থেকে সরে এসেছি এবং অন্য কেউ আমার ভূমিকা নিয়েছে, তখন আমি মনে করি না যে এই কয়েকটি ম্যাচের জন্য আমার ফিরে আসা বোধগম্য।’

‘তবে, এটা ভিন্ন জিনিস যদি তারা (বিসিবি) আমাকে বলে যে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিততে চাই বা অন্তত আমরা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চাই এবং সম্ভবত এটাই হবে শেষ টুর্নামেন্ট যেখানে তিন বা চারজন সিনিয়র খেলোয়াড় খেলবে। পার্থক্য যাই হোক না কেন খেলবে এবং বিসিবি তা ঠিক করবে। এভাবেই আসলে প্রস্তাবটা আসতে হবে।’ – যোগ করেন তামিম।

দেশের অন্যতম সেরা এই ওপেনার সতীর্থদের দিকেও তাকিয়ে, ‘কথা হলো- আমি কি ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে খেলব, নাকি দলের হয়ে খেলব? (অনুরোধ) কোথা থেকে আসা উচিত? ক্রিকেট বোর্ড আমার দেখাশোনা করে কিন্তু খেলোয়াড়দেরও স্বাগত জানাতে হবে।’

এর আগে বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে একাধিকবার একান্তে বৈঠকে বসতে দেখা গেছে তামিমকে। বিশেষ করে গত বছর বিপিএলের পরপরই তামিমকে নিয়ে শোরগোল মেতে যায়। কেননা তামিম ১৫ ম্যাচে ৩৪.১৪ গড় ও ১২৭.১৩ স্ট্রাইক রেটে ৪৯২ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। ধারনা করা হচ্ছিল এরপর হয়তো তামিমকে ফেরানো হবে জাতীয় দলে। কিন্তু তেমনটা হয়নি।’

অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে তার কথোপকথন নিয়ে তামিম সরাসরি গণমাধ্যমে কিছু বলেননি। আবার শান্তও মুখে কলুপ এঁটেছিলেন। তবে এই সাক্ষাৎকারে তামিম নিজের ভাবনা পরিস্কার করেছেন, ‘দেখুন, আমার সবার সাথে ভাল সম্পর্ক আছে এবং আমি জানি যে এটি কোনও সমস্যা হবে না। তবে বলে রাখি, আমি যদি অধিনায়ক হই এবং আমি কিছু অর্জন করতে চাই, তবে আমি আপনার সাথে কথা বলব।’

‘আমার দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিকল্পনা শেয়ার করব। আপনাকে আমার সাথে যাত্রায় যোগ দিতে রাজি করাব এবং প্রয়োজনে সবকিছুর যত্ন নেওয়ার আশ্বাসও দেব। আমার দলে আসা এবং আপনি আমাকে দলে চাওয়া দুটি ভিন্ন জিনিস। যদি এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে তারা (দল এবং খেলোয়াড়) অনুভব করে যে আমাকে প্রয়োজন, তাহলে আমি এটা নিয়ে ভাববো।’ -আরও যোগ করেন তামিম।

//টিআর